ঢাকা ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার, বাবা ও সৎমা গ্রেপ্তার

অপরাধ দৃষ্টি নিউজ
  • আপডেট সময় : ০১:২০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 37
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চটের বস্তায় পলিথিনে মোড়া মরদেহের কিছু অংশ একটি আলুখেতের পাশে মাটিতে চাপা অবস্থায় ছিল। আর বাইরের অংশ পচে-গলে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। পরে খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নে হাঁড়িভাঙা গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

নিহত ব্যক্তির নাম ফেরাইজুল ইসলাম (৪০)। তিনি হাঁড়িভাঙা গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশের ধারণা, ফেরাইজুলকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফেরাইজুলের মামা আবু তাহের বাদী হয়ে তাঁর বাবা আবদুস সামাদ (৬০), সৎমা নূরজাহান বেগমসহ (৫৫) ৬ জনকে আসামি করে গতকাল রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় আবদুস সামাদ ও নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, ফেরাইজুল এলাকায় রিকশাভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্ত্রী থাকলেও তাঁর কোনো সন্তান নেই। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে বাড়ির অদূরে ওয়াজ মাহফিল শুনতে গিয়ে নিখোঁজ হন ফেরাইজুল। পরে তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে চাচা আবদুল বাকী গত ২৪ ডিসেম্বর বদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, একমাত্র ছেলে ফেরাইজুলকে বাড়ি ও সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করার জন্য তাঁর বাবা, সৎমাসহ একাধিক বোন-জামাতা মিলে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতেন। এমনকি বাড়ি ছাড়ার হুমকিও দিতেন। বাধ্য হয়ে ফেরাইজুল গত ২৩ অক্টোবর তাঁর বাবা ও সৎমায়ের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন

ফেরাইজুলের চাচাতো ভাই আইনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ফেরাইজুল ও তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতনসহ প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতেন আবদুস সামাদ, তাঁর একাধিক মেয়ে ও জামাতারা।

তবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফেরাইজুলের বাবা আবদুস সামাদ জানান, ছেলে ও তাঁর বউয়ের ওপর কখনো অত্যাচার-নির্যাতন করেননি তাঁরা। তাঁর ছেলেকে কে মেরেছে এবং কেন মেরেছে—তা বুঝতে পারছেন না। তবে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চান তিনি।

ফেরাইজুলের স্ত্রী রেশমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি ও সম্পত্তির ভাগ না দিতে এবং বাড়ি ছাড়া করতে না পেরে ফেরাইজুলের বাবা ও সৎমা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছেন।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আতিকুর রহমান জানান, ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিন আগেই ফেরাইজুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। লাশ উদ্ধার করে গতকাল সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার, বাবা ও সৎমা গ্রেপ্তার

আপডেট সময় : ০১:২০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

চটের বস্তায় পলিথিনে মোড়া মরদেহের কিছু অংশ একটি আলুখেতের পাশে মাটিতে চাপা অবস্থায় ছিল। আর বাইরের অংশ পচে-গলে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। পরে খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নে হাঁড়িভাঙা গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

নিহত ব্যক্তির নাম ফেরাইজুল ইসলাম (৪০)। তিনি হাঁড়িভাঙা গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশের ধারণা, ফেরাইজুলকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফেরাইজুলের মামা আবু তাহের বাদী হয়ে তাঁর বাবা আবদুস সামাদ (৬০), সৎমা নূরজাহান বেগমসহ (৫৫) ৬ জনকে আসামি করে গতকাল রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় আবদুস সামাদ ও নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, ফেরাইজুল এলাকায় রিকশাভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্ত্রী থাকলেও তাঁর কোনো সন্তান নেই। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে বাড়ির অদূরে ওয়াজ মাহফিল শুনতে গিয়ে নিখোঁজ হন ফেরাইজুল। পরে তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে চাচা আবদুল বাকী গত ২৪ ডিসেম্বর বদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, একমাত্র ছেলে ফেরাইজুলকে বাড়ি ও সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করার জন্য তাঁর বাবা, সৎমাসহ একাধিক বোন-জামাতা মিলে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতেন। এমনকি বাড়ি ছাড়ার হুমকিও দিতেন। বাধ্য হয়ে ফেরাইজুল গত ২৩ অক্টোবর তাঁর বাবা ও সৎমায়ের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন

ফেরাইজুলের চাচাতো ভাই আইনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ফেরাইজুল ও তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতনসহ প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতেন আবদুস সামাদ, তাঁর একাধিক মেয়ে ও জামাতারা।

তবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফেরাইজুলের বাবা আবদুস সামাদ জানান, ছেলে ও তাঁর বউয়ের ওপর কখনো অত্যাচার-নির্যাতন করেননি তাঁরা। তাঁর ছেলেকে কে মেরেছে এবং কেন মেরেছে—তা বুঝতে পারছেন না। তবে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চান তিনি।

ফেরাইজুলের স্ত্রী রেশমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি ও সম্পত্তির ভাগ না দিতে এবং বাড়ি ছাড়া করতে না পেরে ফেরাইজুলের বাবা ও সৎমা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছেন।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আতিকুর রহমান জানান, ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিন আগেই ফেরাইজুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। লাশ উদ্ধার করে গতকাল সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।