ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় রোদ দেখে বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় বানভাসিরা, লাগবে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৪:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / 138
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর ভাঙনে দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত পানিবন্দী আছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো বানভাসি মানুষেরা আজ শনিবার সকালে দেখল ঝলমলে রোদ। টানা বৃষ্টির পর এমন রোদ দেখে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া বানভাসি মানুষেরা ঘরে ফেরার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, পানি না কমা পর্যন্ত পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার।

গোমতীর ভাঙনের ফলে নতুন করে বুড়িচং উপজেলার বাকশিমূল, রাজাপুর ইউনিয়নের আরও ১০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এ নিয়ে অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে নিরাপদ স্থানে যেতে পারছে না অনেকে।

বাকশিমূল ইউনিয়নের বাকশিমূল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ওপরে হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমড়সমান পানি। তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধারকারী ব্যক্তিরা গ্রামের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাড়ি থেকে গোমতী নদীর ভাঙনস্থল ১০ কিলোমিটার দূরে। তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি, নদীভাঙনের পানি তাঁর বাড়ি ডুবিয়ে দেবে।

মহিষমারা এলাকার আবদুস সালাম বলেন, ‘দুই দিন অইছে ভাত খাই না। বিস্কুট, পানি খাইয়া রইছি। আমরা এহন বইয়া রইছি পানি কুন সময় কমব।’

কুমিল্লা–বুড়িচং সড়কের ইছাপুরা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মহিষমারা গ্রামের জহির হোসেন বলেন, এমন পানি জীবনেও দেখেননি। জমির ফসল শেষ। পুকুরের মাছও শেষ। বাড়ি ডুবে গেছে। পানি না কমলে কেমনে কী !

গাজীপুর এলাকার আবদুর রহিম দুই দিন রাস্তার পাশে রাত কাটাচ্ছেন। বাড়ির মায়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। তিনি বলেন, ‘আইজ তিনডা রাইত চোখে গুম নাইয়ো। চোহের সামনে বাড়িডা ডুইব্বা গেল। এরুম পানি অইব জীবনেও চিন্তা করছি না। আইজ তিন দিন পর রইদ দেখছি। আল্লাহ আর মেগ দিয়ো না।’

আজ সকালে বুড়বুড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা অংশ দিয়ে এখনো তীব্র স্রোতে পানি ঢুকছে। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া অনেকের কাছে এখনো পানি ও শুকনা খাবার পৌঁছায়নি বলে অসহায় মুখে জানান বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ওই এলাকার বাসিন্দারা। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া সুমি রানী বলেন, বাড়ি থেকে আসার সময় চিড়া ছিল। ওগুলো খেয়েছেন। গতকাল একদল মানুষ এসে কিছু বিস্কুট ও পানি দিয়ে গেছেন, সেগুলো খেয়েছেন। তারপর কী খাবেন, জানেন না।

পাশে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় লাকি আক্তারকে। স্বামী ভ্যানচালক সহিদুর মিয়া। লাকি আক্তার বলেন, ‘একটা ঘর আছিল। গোমতী এইডারে লইয়া গেল। পানি সইরা গেলেও কী লাভ অইব, বাড়ি কই পামু?’

এদিকে রাজাপুর এলাকায় পানি বাড়ছে। এই এলাকার পরই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। সেই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকছে।

দুলালপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, গোমতী নদীর পানি এবং সালদা নদীর পানি যেভাবে আসছে, আগামীকালের মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়ার আরও গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, এখনো গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ পানি কমতে পারে।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান বলেন, একজন মানুষও যেন খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সেভাবেই কাজ করছে। নৌকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব নৌকায় করে প্রত্যন্ত এলাকায় বানের পানিতে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

কুমিল্লায় রোদ দেখে বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় বানভাসিরা, লাগবে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি

আপডেট সময় : ১১:১৪:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর ভাঙনে দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত পানিবন্দী আছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো বানভাসি মানুষেরা আজ শনিবার সকালে দেখল ঝলমলে রোদ। টানা বৃষ্টির পর এমন রোদ দেখে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া বানভাসি মানুষেরা ঘরে ফেরার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, পানি না কমা পর্যন্ত পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার।

গোমতীর ভাঙনের ফলে নতুন করে বুড়িচং উপজেলার বাকশিমূল, রাজাপুর ইউনিয়নের আরও ১০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এ নিয়ে অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে নিরাপদ স্থানে যেতে পারছে না অনেকে।

বাকশিমূল ইউনিয়নের বাকশিমূল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ওপরে হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমড়সমান পানি। তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধারকারী ব্যক্তিরা গ্রামের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাড়ি থেকে গোমতী নদীর ভাঙনস্থল ১০ কিলোমিটার দূরে। তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি, নদীভাঙনের পানি তাঁর বাড়ি ডুবিয়ে দেবে।

মহিষমারা এলাকার আবদুস সালাম বলেন, ‘দুই দিন অইছে ভাত খাই না। বিস্কুট, পানি খাইয়া রইছি। আমরা এহন বইয়া রইছি পানি কুন সময় কমব।’

কুমিল্লা–বুড়িচং সড়কের ইছাপুরা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মহিষমারা গ্রামের জহির হোসেন বলেন, এমন পানি জীবনেও দেখেননি। জমির ফসল শেষ। পুকুরের মাছও শেষ। বাড়ি ডুবে গেছে। পানি না কমলে কেমনে কী !

গাজীপুর এলাকার আবদুর রহিম দুই দিন রাস্তার পাশে রাত কাটাচ্ছেন। বাড়ির মায়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। তিনি বলেন, ‘আইজ তিনডা রাইত চোখে গুম নাইয়ো। চোহের সামনে বাড়িডা ডুইব্বা গেল। এরুম পানি অইব জীবনেও চিন্তা করছি না। আইজ তিন দিন পর রইদ দেখছি। আল্লাহ আর মেগ দিয়ো না।’

আজ সকালে বুড়বুড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা অংশ দিয়ে এখনো তীব্র স্রোতে পানি ঢুকছে। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া অনেকের কাছে এখনো পানি ও শুকনা খাবার পৌঁছায়নি বলে অসহায় মুখে জানান বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ওই এলাকার বাসিন্দারা। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া সুমি রানী বলেন, বাড়ি থেকে আসার সময় চিড়া ছিল। ওগুলো খেয়েছেন। গতকাল একদল মানুষ এসে কিছু বিস্কুট ও পানি দিয়ে গেছেন, সেগুলো খেয়েছেন। তারপর কী খাবেন, জানেন না।

পাশে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় লাকি আক্তারকে। স্বামী ভ্যানচালক সহিদুর মিয়া। লাকি আক্তার বলেন, ‘একটা ঘর আছিল। গোমতী এইডারে লইয়া গেল। পানি সইরা গেলেও কী লাভ অইব, বাড়ি কই পামু?’

এদিকে রাজাপুর এলাকায় পানি বাড়ছে। এই এলাকার পরই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। সেই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকছে।

দুলালপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, গোমতী নদীর পানি এবং সালদা নদীর পানি যেভাবে আসছে, আগামীকালের মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়ার আরও গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, এখনো গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ পানি কমতে পারে।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান বলেন, একজন মানুষও যেন খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সেভাবেই কাজ করছে। নৌকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব নৌকায় করে প্রত্যন্ত এলাকায় বানের পানিতে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে।