ঢাকা ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ দিনেও মামলা হয়নি, ‘সাগর বাহিনী’র ভয়ে ঘটনাস্থল পুরুষশূন্য

আহাদুল ইসলাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 156
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বগুড়ার শাজাহানপুরের সাবরুল এলাকার ‘সাগর বাহিনী’র প্রধান সাগর হোসেন তালুকদার (৩৫) ওরফে ‘টোকাই সাগর’ ও তাঁর সহযোগী স্বপন (৩২) হত্যাকাণ্ডের তিন দিনেও কোনো মামলা হয়নি। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা সাগরের অন্যতম সহযোগী মুক্তার হোসেনের (২৯) খোঁজে মাঠে নামলেও তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি।

সাগর ও স্বপন হত্যাকাণ্ডের সময় মুক্তার তাঁদের মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। হত্যার ঘটনার পর মুক্তারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে মুক্তারের হদিস মিলছে না।

বগুড়া ডিবির ওসি মুস্তাফিজ হাসান বলেন, হত্যার ঘটনার সময় মুক্তার হোসেন সাগরের সঙ্গেই ছিলেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। হত্যাকারীদের ভয়ে কিংবা রাজসাক্ষী হওয়ার ভয়ে মুক্তার নিজে থেকে আত্মগোপনে থাকতে পারেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এলাকার মাছের খামার থেকে মোটরসাইকেলে নিজের বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল বাজারে ফিরছিলেন সাগর। পথে সাবরুল ছোট মণ্ডলপাড়া এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে সাগর ও তাঁর সহযোগী স্বপন নিহত হন। সাগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

এদিকে সাগর হত্যার বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তাঁর দলের সদস্যরা। সাবরুল মণ্ডলপাড়ায় যেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনাস্থলের পাশে আবদুল গফুর নামে একজনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। গত সোমবার সাগর বাহিনীর সদস্যরা এই ভাঙচুর করেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। ওই ঘটনার পর আতঙ্কে বাড়িছাড়া সাবরুল মণ্ডলপাড়ার লোকজন। সাগর বাহিনীর সদস্যদের ভয়ে পুরুষশূন্য সাবরুল মণ্ডলপাড়া। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সাবরুল বাজারেও। সাগর ও তাঁর সহযোগী স্বপন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলছে না এলাকাবাসী।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাবরুল মণ্ডলপাড়ায় গফুর মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি হত্যার ঘটনা ঘটলেও তাঁরা কিছু দেখেননি। তারপরও তাঁর স্বামীর খোঁজে সাগর বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বাড়িতে হামলা করেছে বলে তাঁর অভিযোগ। এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের পাড়ার অন্য পুরুষেরাও বাড়িছাড়া হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার আশপাশের ৩০ গ্রামে এত দিন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন সাগর তালুকদার। সাবরুল বাজারে সাগরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মামা-ভাগনে এন্টারপ্রাইজ ছিল তাঁর আস্তানা। বাড়ি নির্মাণ, জমি কেনাবেচা, ব্যবসা—সবকিছুতেই সাগরকে চাঁদা দিতে হতো। অর্ধশতাধিক সদস্যের নিজস্ব বাহিনী আছে তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে সড়কে মাছের গাড়ি, যানবাহন থেকে শুরু করে জমি চাষের পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর থেকেও চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

৩ দিনেও মামলা হয়নি, ‘সাগর বাহিনী’র ভয়ে ঘটনাস্থল পুরুষশূন্য

আপডেট সময় : ১২:২৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বগুড়ার শাজাহানপুরের সাবরুল এলাকার ‘সাগর বাহিনী’র প্রধান সাগর হোসেন তালুকদার (৩৫) ওরফে ‘টোকাই সাগর’ ও তাঁর সহযোগী স্বপন (৩২) হত্যাকাণ্ডের তিন দিনেও কোনো মামলা হয়নি। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা সাগরের অন্যতম সহযোগী মুক্তার হোসেনের (২৯) খোঁজে মাঠে নামলেও তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি।

সাগর ও স্বপন হত্যাকাণ্ডের সময় মুক্তার তাঁদের মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। হত্যার ঘটনার পর মুক্তারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে মুক্তারের হদিস মিলছে না।

বগুড়া ডিবির ওসি মুস্তাফিজ হাসান বলেন, হত্যার ঘটনার সময় মুক্তার হোসেন সাগরের সঙ্গেই ছিলেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। হত্যাকারীদের ভয়ে কিংবা রাজসাক্ষী হওয়ার ভয়ে মুক্তার নিজে থেকে আত্মগোপনে থাকতে পারেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এলাকার মাছের খামার থেকে মোটরসাইকেলে নিজের বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল বাজারে ফিরছিলেন সাগর। পথে সাবরুল ছোট মণ্ডলপাড়া এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে সাগর ও তাঁর সহযোগী স্বপন নিহত হন। সাগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

এদিকে সাগর হত্যার বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তাঁর দলের সদস্যরা। সাবরুল মণ্ডলপাড়ায় যেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনাস্থলের পাশে আবদুল গফুর নামে একজনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। গত সোমবার সাগর বাহিনীর সদস্যরা এই ভাঙচুর করেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। ওই ঘটনার পর আতঙ্কে বাড়িছাড়া সাবরুল মণ্ডলপাড়ার লোকজন। সাগর বাহিনীর সদস্যদের ভয়ে পুরুষশূন্য সাবরুল মণ্ডলপাড়া। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সাবরুল বাজারেও। সাগর ও তাঁর সহযোগী স্বপন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলছে না এলাকাবাসী।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাবরুল মণ্ডলপাড়ায় গফুর মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি হত্যার ঘটনা ঘটলেও তাঁরা কিছু দেখেননি। তারপরও তাঁর স্বামীর খোঁজে সাগর বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বাড়িতে হামলা করেছে বলে তাঁর অভিযোগ। এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের পাড়ার অন্য পুরুষেরাও বাড়িছাড়া হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার আশপাশের ৩০ গ্রামে এত দিন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন সাগর তালুকদার। সাবরুল বাজারে সাগরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মামা-ভাগনে এন্টারপ্রাইজ ছিল তাঁর আস্তানা। বাড়ি নির্মাণ, জমি কেনাবেচা, ব্যবসা—সবকিছুতেই সাগরকে চাঁদা দিতে হতো। অর্ধশতাধিক সদস্যের নিজস্ব বাহিনী আছে তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে সড়কে মাছের গাড়ি, যানবাহন থেকে শুরু করে জমি চাষের পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর থেকেও চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আছে।