ঢাকা ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাঙামাটি শহরে সংঘাতের ক্ষত, ভয় কাটেনি

আহাদুল ইসলাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 153
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঠিক এক যুগের ব্যবধানে বড় ধরনের সংঘাত দেখল রাঙামাটি শহর। গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) পাহাড়ি ও বাঙালিদের সংঘর্ষ হয়। এদিন অনিক কুমার চাকমা নামের ওই তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় দক্ষিণ কালিন্দীপুর সড়কে।

ঘটনাক্রমে ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এ শহরেই পাহাড়ি–বাঙালির সংঘাত হয়েছিল। শহরের বনরূপা বাজারের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার হামলা হয়েছিল, ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। এবার ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেভরনের একাংশ।

শেভরনের নিচতলায় প্রতিটি কক্ষে পোড়া দাগ। যত্রতত্র পড়ে আছে ল্যাবের যন্ত্রাংশ। সংঘর্ষের পর গত মঙ্গলবার খুলেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। মঙ্গলবার দুপুরে একটি কক্ষে বসে কথা হচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটির মালিক পরশ খীসার সঙ্গে। বলছিলেন, ‘এবার যে হামলা দেখলাম, তা নজিরবিহীন। অন্তত আমি দেখিনি। আগের কোনো সংঘাতে এত দোকান ও প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’

যা হয়েছিল শুক্রবার

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদরে ১৮ সেপ্টেম্বর পাহাড়ি–বাঙালি সংঘর্ষ এবং পরদিন দীঘিনালায় গোলাগুলিতে তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। এর প্রতিবাদে রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। এ জোট গঠিত হয় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। আগেও দু–একবার তাদের মিছিল হয়েছে। মিছিলগুলো থেকে দাবিদাওয়া রাঙামাটির জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দিয়েই কর্মসূচির শেষ হতো। কিন্তু শুক্রবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পার হয়ে মিছিলটি বনরূপা বাজার পর্যন্ত যায়। মিছিলটি বনরূপা বাজারে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসার সময় সংঘাত বাধে। এ সংঘর্ষের শুরু নিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিছিলকারীদের একজন বলেন, মিছিলে বনরূপা বাজারের একটি দোতলা ভবন থেকে কয়েকজন বাঙালি যুবক ঢিল ছোড়েন। মিছিলকারীদের কেউ কেউ পাল্টা ঢিল ছোড়েন। এ সময় পাশের মসজিদ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে হামলা হয়েছে। এ জন্য বাঙালিদের একত্র হতে আহ্বান জানানো হয়। এরপরই ২৫ থেকে ৩০ জন বাঙালি যুবক পাহাড়িদের মিছিলের ওপর হামলা করেন। পাহাড়িরা সংখ্যায় বেশি হলেও আক্রমণের মুখে পালিয়ে যেতে শুরু করেন।

বনরূপা মসজিদে গিয়ে কথা হয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ূব চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি রাস্তার পাশে মসজিদের কাচের ভাঙা জানালাগুলো দেখান। দেখা যায়, চারটি জানালা ভেঙে গেছে। ভেতরে আরও তিন স্থানে এমনভাবে ভাঙা হয় বলে দাবি করেন আইয়ূব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পাহাড়িদের মিছিল থেকেই প্রথম হামলা হয়েছিল। আমি ঘটনা জানার পর মসজিদে এসে মাইকে হামলার ঘোষণা দিই। তবে সবাইকে শান্তি রক্ষার জন্য আমরা বলি।’

পোড়ার ক্ষত নানা স্থানে

বনরূপা বাজারে বাঙালিদের দোকানের ‘তেমন কিছু’ না হলেও পুড়ে ছাই হওয়া দোকান চোখে পড়ে বাজার ছাড়িয়ে কিছু দূর গেলে। সেখানে পাহাড়িদের মালিকানাধীন পাশাপাশি থাকা চারটি ওষুধের দোকানের একটিও অক্ষত নেই। একটু দূরে শেভরনের দুই পাশে বাঙালিদের মালিকানাধীন দুটি বড় বিপণিবিতান দেখা যায়, দোকানগুলো অক্ষত। এর ঠিক পেছনে বেশ খানিকটা নিচে সাতটি পাহাড়ি পরিবারের বাস। রাস্তা থেকে কংক্রিটের সিঁড়ি দিয়ে যেতে হয় টিনশেডের বাড়িগুলোর দিকে। ওপর থেকেই দেখা গেল, টিনগুলো পুড়ে কালো হয়ে আছে। বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া গেল না। টিনের বাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন সূচনা চাকমা। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর বাড়ির জানালাগুলো পোড়া। তাঁর দুই ঘরের সোফা ছিন্নভিন্ন, টেবিল–চেয়ার যত্রতত্র পড়ে আছে।

সূচনা বলছিলেন, ‘নিচের ঘরগুলোতে আগুন দেওয়া দেখে আর দেরি করিনি। পালিয়ে চলে গিয়েছিলাম। থাকলে হয়তো জীবন চলে যেত। ২০০৬ সাল থেকে এখানে আছি। ২০১২ সালে শুধু ইটপাটকেল ছুড়েছিল। এবার হামলা আর লুটপাট।’

পাহাড়িদের মিছিল থেকেই প্রথম হামলা হয়েছিল। আমি ঘটনা জানার পর মসজিদে এসে মাইকে হামলার ঘোষণা দিই। তবে সবাইকে শান্তি রক্ষার জন্য আমরা বলি

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ূব চৌধুরী

বনরূপা বাজার থেকে রাঙামাটি শহরের দক্ষিণ দিকে বিজন সরণি পর্যন্ত রাস্তার পাশে পাহাড়িদের দোকানগুলো বেছে বেছে ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে। বিজন সরণিতে একটি ঝকঝকে পাঁচতলা ভবন। এর মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কীর্তি রঞ্জন চাকমা। সেখানে আছে ‘রাঙামাটি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। ৩০ সেপ্টেম্বর এটির উদ্বোধনের কথা ছিল। পুরো ভবনে কাচ পড়ে আছে। নতুন চেয়ার, সোফাসহ সব ভাঙা।

এ ভবনের নিচে কয়েকটি দোকানের মধ্যে একটি ‘বিসমিল্লাহ থাই গ্লাস’। এর মালিক মো. ফোরকান বলেন, ‘আমার দোকানটি বন্ধ ছিল। এই এলাকায় চাকমারাই বেশি থাকে। দোকানের তেমন ক্ষতি করেনি।’

নিচের ঘরগুলোতে আগুন দেওয়া দেখে আর দেরি করিনি। পালিয়ে চলে গিয়েছিলাম। থাকলে হয়তো জীবন চলে যেত। ২০০৬ সাল থেকে এখানে আছি। ২০১২ সালে শুধু ইটপাটকেল ছুড়েছিল। এবার হামলা আর লুটপাট।’

আঞ্চলিক পরিষদেও হামলা

দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। এর চেয়ারম্যান পাহাড়িদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। শুক্রবারের সংঘর্ষের চিহ্ন এখনো পরিষদের দোতলা ভবনের সর্বত্র।

আঞ্চলিক পরিষদের ভবন থেকে ঢিল ছোড়ার দূরত্বে রাঙামাটির জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। সেখানে শুক্রবারের ঘটনার পর ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও চলছিল। জেলা প্রশাসক মোশাররফ হোসেন খান বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনায় ৯ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা হিসাব করেছি।’

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, দোকানসহ ক্ষতিগ্রস্ত ৮৯টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগুন দেওয়া হয়েছে ২৭টিতে, ভাঙচুর করা হয়েছে ৬২টি। ক্ষতিগ্রস্ত ১৯টি বাড়ির মধ্যে ৭টি আগুনে পুড়ে গেছে, ১২টি ভাঙচুর করা হয়েছে।

আঞ্চলিক পরিষদের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এর আগে সংঘাতের সময় দুষ্কৃতকারীরা বড়জোর ঢিল মেরে চলে গেছে; কিন্তু এভাবে পোড়ানোর ঘটনা এই প্রথম।

দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। এর চেয়ারম্যান পাহাড়িদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। শুক্রবারের সংঘর্ষের চিহ্ন এখনো পরিষদের দোতলা ভবনের সর্বত্র।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

রাঙামাটি শহরে সংঘাতের ক্ষত, ভয় কাটেনি

আপডেট সময় : ১১:৪৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঠিক এক যুগের ব্যবধানে বড় ধরনের সংঘাত দেখল রাঙামাটি শহর। গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) পাহাড়ি ও বাঙালিদের সংঘর্ষ হয়। এদিন অনিক কুমার চাকমা নামের ওই তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় দক্ষিণ কালিন্দীপুর সড়কে।

ঘটনাক্রমে ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এ শহরেই পাহাড়ি–বাঙালির সংঘাত হয়েছিল। শহরের বনরূপা বাজারের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার হামলা হয়েছিল, ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। এবার ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেভরনের একাংশ।

শেভরনের নিচতলায় প্রতিটি কক্ষে পোড়া দাগ। যত্রতত্র পড়ে আছে ল্যাবের যন্ত্রাংশ। সংঘর্ষের পর গত মঙ্গলবার খুলেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। মঙ্গলবার দুপুরে একটি কক্ষে বসে কথা হচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটির মালিক পরশ খীসার সঙ্গে। বলছিলেন, ‘এবার যে হামলা দেখলাম, তা নজিরবিহীন। অন্তত আমি দেখিনি। আগের কোনো সংঘাতে এত দোকান ও প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’

যা হয়েছিল শুক্রবার

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদরে ১৮ সেপ্টেম্বর পাহাড়ি–বাঙালি সংঘর্ষ এবং পরদিন দীঘিনালায় গোলাগুলিতে তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। এর প্রতিবাদে রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। এ জোট গঠিত হয় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। আগেও দু–একবার তাদের মিছিল হয়েছে। মিছিলগুলো থেকে দাবিদাওয়া রাঙামাটির জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দিয়েই কর্মসূচির শেষ হতো। কিন্তু শুক্রবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পার হয়ে মিছিলটি বনরূপা বাজার পর্যন্ত যায়। মিছিলটি বনরূপা বাজারে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসার সময় সংঘাত বাধে। এ সংঘর্ষের শুরু নিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিছিলকারীদের একজন বলেন, মিছিলে বনরূপা বাজারের একটি দোতলা ভবন থেকে কয়েকজন বাঙালি যুবক ঢিল ছোড়েন। মিছিলকারীদের কেউ কেউ পাল্টা ঢিল ছোড়েন। এ সময় পাশের মসজিদ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে হামলা হয়েছে। এ জন্য বাঙালিদের একত্র হতে আহ্বান জানানো হয়। এরপরই ২৫ থেকে ৩০ জন বাঙালি যুবক পাহাড়িদের মিছিলের ওপর হামলা করেন। পাহাড়িরা সংখ্যায় বেশি হলেও আক্রমণের মুখে পালিয়ে যেতে শুরু করেন।

বনরূপা মসজিদে গিয়ে কথা হয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ূব চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি রাস্তার পাশে মসজিদের কাচের ভাঙা জানালাগুলো দেখান। দেখা যায়, চারটি জানালা ভেঙে গেছে। ভেতরে আরও তিন স্থানে এমনভাবে ভাঙা হয় বলে দাবি করেন আইয়ূব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পাহাড়িদের মিছিল থেকেই প্রথম হামলা হয়েছিল। আমি ঘটনা জানার পর মসজিদে এসে মাইকে হামলার ঘোষণা দিই। তবে সবাইকে শান্তি রক্ষার জন্য আমরা বলি।’

পোড়ার ক্ষত নানা স্থানে

বনরূপা বাজারে বাঙালিদের দোকানের ‘তেমন কিছু’ না হলেও পুড়ে ছাই হওয়া দোকান চোখে পড়ে বাজার ছাড়িয়ে কিছু দূর গেলে। সেখানে পাহাড়িদের মালিকানাধীন পাশাপাশি থাকা চারটি ওষুধের দোকানের একটিও অক্ষত নেই। একটু দূরে শেভরনের দুই পাশে বাঙালিদের মালিকানাধীন দুটি বড় বিপণিবিতান দেখা যায়, দোকানগুলো অক্ষত। এর ঠিক পেছনে বেশ খানিকটা নিচে সাতটি পাহাড়ি পরিবারের বাস। রাস্তা থেকে কংক্রিটের সিঁড়ি দিয়ে যেতে হয় টিনশেডের বাড়িগুলোর দিকে। ওপর থেকেই দেখা গেল, টিনগুলো পুড়ে কালো হয়ে আছে। বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া গেল না। টিনের বাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন সূচনা চাকমা। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর বাড়ির জানালাগুলো পোড়া। তাঁর দুই ঘরের সোফা ছিন্নভিন্ন, টেবিল–চেয়ার যত্রতত্র পড়ে আছে।

সূচনা বলছিলেন, ‘নিচের ঘরগুলোতে আগুন দেওয়া দেখে আর দেরি করিনি। পালিয়ে চলে গিয়েছিলাম। থাকলে হয়তো জীবন চলে যেত। ২০০৬ সাল থেকে এখানে আছি। ২০১২ সালে শুধু ইটপাটকেল ছুড়েছিল। এবার হামলা আর লুটপাট।’

পাহাড়িদের মিছিল থেকেই প্রথম হামলা হয়েছিল। আমি ঘটনা জানার পর মসজিদে এসে মাইকে হামলার ঘোষণা দিই। তবে সবাইকে শান্তি রক্ষার জন্য আমরা বলি

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ূব চৌধুরী

বনরূপা বাজার থেকে রাঙামাটি শহরের দক্ষিণ দিকে বিজন সরণি পর্যন্ত রাস্তার পাশে পাহাড়িদের দোকানগুলো বেছে বেছে ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে। বিজন সরণিতে একটি ঝকঝকে পাঁচতলা ভবন। এর মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কীর্তি রঞ্জন চাকমা। সেখানে আছে ‘রাঙামাটি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। ৩০ সেপ্টেম্বর এটির উদ্বোধনের কথা ছিল। পুরো ভবনে কাচ পড়ে আছে। নতুন চেয়ার, সোফাসহ সব ভাঙা।

এ ভবনের নিচে কয়েকটি দোকানের মধ্যে একটি ‘বিসমিল্লাহ থাই গ্লাস’। এর মালিক মো. ফোরকান বলেন, ‘আমার দোকানটি বন্ধ ছিল। এই এলাকায় চাকমারাই বেশি থাকে। দোকানের তেমন ক্ষতি করেনি।’

নিচের ঘরগুলোতে আগুন দেওয়া দেখে আর দেরি করিনি। পালিয়ে চলে গিয়েছিলাম। থাকলে হয়তো জীবন চলে যেত। ২০০৬ সাল থেকে এখানে আছি। ২০১২ সালে শুধু ইটপাটকেল ছুড়েছিল। এবার হামলা আর লুটপাট।’

আঞ্চলিক পরিষদেও হামলা

দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। এর চেয়ারম্যান পাহাড়িদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। শুক্রবারের সংঘর্ষের চিহ্ন এখনো পরিষদের দোতলা ভবনের সর্বত্র।

আঞ্চলিক পরিষদের ভবন থেকে ঢিল ছোড়ার দূরত্বে রাঙামাটির জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। সেখানে শুক্রবারের ঘটনার পর ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও চলছিল। জেলা প্রশাসক মোশাররফ হোসেন খান বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনায় ৯ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা হিসাব করেছি।’

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, দোকানসহ ক্ষতিগ্রস্ত ৮৯টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগুন দেওয়া হয়েছে ২৭টিতে, ভাঙচুর করা হয়েছে ৬২টি। ক্ষতিগ্রস্ত ১৯টি বাড়ির মধ্যে ৭টি আগুনে পুড়ে গেছে, ১২টি ভাঙচুর করা হয়েছে।

আঞ্চলিক পরিষদের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এর আগে সংঘাতের সময় দুষ্কৃতকারীরা বড়জোর ঢিল মেরে চলে গেছে; কিন্তু এভাবে পোড়ানোর ঘটনা এই প্রথম।

দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। এর চেয়ারম্যান পাহাড়িদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। শুক্রবারের সংঘর্ষের চিহ্ন এখনো পরিষদের দোতলা ভবনের সর্বত্র।