ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় সকালে মুষলধারে বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

আহাদুল ইসলাম
  • আপডেট সময় : ১২:০১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • / 126
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নেত্রকোনায় আজ মঙ্গলবার ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এতে বন্যার পানি বেড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে নেত্রকোনার আকাশে রোদের দেখা মেলে। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। এতে বন্যাপ্লাবিত পাঁচটি উপজেলায় পানি সামান্য কমেছিল। কিন্তু আজ ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বধলার জারিয়া বাজার এলাকায় আজ সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ওই কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক সাওয়ার জাহান সকাল পৌনে ১০টার দিকে জানান, উব্দাখালীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। অবশ্য দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও সদর উপজেলার কংস নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে পানি কিছুটা বাড়লেও আশা করা যাচ্ছে দ্রুত নেমে যাবে।

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া শেরপুরের ভোগাই-কংসের পানি জারিয়া এলাকায় কংস নদ দিয়ে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হয়। এতে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর—পাঁচটি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস আজ সকালে মুঠোফোনে বলেন, ‘কিছুটা দম ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি বাড়ছে। পূর্বধলার জারিয়া এলাকা কংস নদের তীরে থাকা বেড়িবাঁধটি দুই স্থানে ভেঙে গেছে। এর পর থেকে পূর্বধলা, সদর ও বারহাট্টার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফসলি জমিরও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তবে বন্যা মোকাবিলায় আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বনানী বিশ্বাস জানান, এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা, ২ হাজার ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৭০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র ও জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ২৭টি ইউনিয়নে ১৩১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন ৬৫ হাজার মানুষ। ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৪৩টি পরিবার। প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়। পাঠদান বন্ধ রাখা হয় ২০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৮৬টি। ২১৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্রায় ৩১০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে রয়েছে।

গ্রামের বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। আজ সকালে বারহাট্টা উপজেলার মান্দারতলা এলাকায়
গ্রামের বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। আজ সকালে বারহাট্টা উপজেলার মান্দারতলা এলাকায়ছবি:

কলমাকান্দার ঘনিচা গ্রামের ফরিদ তালুকদার বলেন, ‘পানি আজ সকাল থেকে আরও বাড়ছে। ১৫ একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলাম। বেশ কিছু খেতের ধান গাছে শিষ ছাড়ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে সব ধানগাছের ওপর তিন থেকে আট ফুট পানি। তিন ধরে এই অবস্থা। মনে হয় কোনো ধানগাছ আর টিকবে না।’

দুর্গাপুরের কাকৈইগড়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘চার দিন ধরে গ্রামের সবার ধানখেত পানির নিচে। কোনো খেতের ধানই আর রক্ষা হবে না। গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে আছি। উঁচু সড়কে খোলা আকাশের নিচে গরু রাখা হয়েছে। খড় না থাকায় খাবার দিতে পারছি না। এলাকার সবারই একই অবস্থা।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নেত্রকোনায় সকালে মুষলধারে বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

আপডেট সময় : ১২:০১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

নেত্রকোনায় আজ মঙ্গলবার ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এতে বন্যার পানি বেড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে নেত্রকোনার আকাশে রোদের দেখা মেলে। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। এতে বন্যাপ্লাবিত পাঁচটি উপজেলায় পানি সামান্য কমেছিল। কিন্তু আজ ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বধলার জারিয়া বাজার এলাকায় আজ সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ওই কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক সাওয়ার জাহান সকাল পৌনে ১০টার দিকে জানান, উব্দাখালীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। অবশ্য দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও সদর উপজেলার কংস নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে পানি কিছুটা বাড়লেও আশা করা যাচ্ছে দ্রুত নেমে যাবে।

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া শেরপুরের ভোগাই-কংসের পানি জারিয়া এলাকায় কংস নদ দিয়ে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হয়। এতে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর—পাঁচটি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস আজ সকালে মুঠোফোনে বলেন, ‘কিছুটা দম ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি বাড়ছে। পূর্বধলার জারিয়া এলাকা কংস নদের তীরে থাকা বেড়িবাঁধটি দুই স্থানে ভেঙে গেছে। এর পর থেকে পূর্বধলা, সদর ও বারহাট্টার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফসলি জমিরও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তবে বন্যা মোকাবিলায় আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বনানী বিশ্বাস জানান, এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা, ২ হাজার ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৭০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র ও জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ২৭টি ইউনিয়নে ১৩১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন ৬৫ হাজার মানুষ। ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৪৩টি পরিবার। প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়। পাঠদান বন্ধ রাখা হয় ২০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৮৬টি। ২১৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্রায় ৩১০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে রয়েছে।

গ্রামের বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। আজ সকালে বারহাট্টা উপজেলার মান্দারতলা এলাকায়
গ্রামের বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। আজ সকালে বারহাট্টা উপজেলার মান্দারতলা এলাকায়ছবি:

কলমাকান্দার ঘনিচা গ্রামের ফরিদ তালুকদার বলেন, ‘পানি আজ সকাল থেকে আরও বাড়ছে। ১৫ একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলাম। বেশ কিছু খেতের ধান গাছে শিষ ছাড়ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে সব ধানগাছের ওপর তিন থেকে আট ফুট পানি। তিন ধরে এই অবস্থা। মনে হয় কোনো ধানগাছ আর টিকবে না।’

দুর্গাপুরের কাকৈইগড়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘চার দিন ধরে গ্রামের সবার ধানখেত পানির নিচে। কোনো খেতের ধানই আর রক্ষা হবে না। গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে আছি। উঁচু সড়কে খোলা আকাশের নিচে গরু রাখা হয়েছে। খড় না থাকায় খাবার দিতে পারছি না। এলাকার সবারই একই অবস্থা।’