ঢাকা ১০:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘দুই সন্তান নিয়ে আমি কোথায় যাব’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৯:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমাবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪
  • / 127
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘আমার বাপের বাড়িতে গিয়ে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। স্বামীও আমাকে অকূলে ভাসিয়ে চলে গেলেন। আমি কীভাবে এই দুই সন্তানকে মানুষ করব? কে তাদের দেখবে? কে তাদের মুখে খাবার তুলে দেবে? তারা কাকে বাবা বলে ডাকবে?’ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন গত ৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত মাইক্রোবাসের চালক মাঈন উদ্দিনের স্ত্রী নুরুন নাহার (২৬)।

সোনাইমুড়ী পৌরসভার শিমুলিয়া গ্রামে মাঈন উদ্দিনের বাড়ি। সেখানে গেলে কথা হয় নুরুন নাহারের সঙ্গে। পাশে বসা তাঁর দুই সন্তান মো. সিফাত উদ্দিন (৮) ও ইসফিয়া আক্তার (৬) এখনো বাবাকে খোঁজে বলে জানালেন তাদের মা। বাবা নেই, সেটা এখনো জানে না তারা।

নুরুন নাহার বলেন, রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ৫ আগস্ট সোমবার মাইক্রোবাস নিয়ে বের হননি তাঁর স্বামী। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে মাইক্রোবাস গ্যারেজে রেখে আসার কথা বলে বের হন। তখন তাঁরও ঘুম ভেঙে যায়। পেছন পেছন তিনিও গিয়েছিলেন। স্বামীকে বলেছিলেন, সোনাইমুড়ী বাজারের দিকে না যেতে। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।

নুরুন নাহার বলেন, সেদিন প্রতিবেশীরা বলছিলেন, সোনাইমুড়ী থানার সামনে গন্ডগোল হচ্ছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে পাশের বাড়ির একটি মেয়ে এসে তাঁকে জানায়, তাঁর স্বামী মাঈন উদ্দিন গুলি খেয়েছেন। তবে নুরুন নাহার তার কথা বিশ্বাসই করতে পারেননি। কারণ তাঁর স্বামী সক্রিয়ভাবে কোনো দল করতেন না। গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতেন। তিনি তো মারামারির মধ্যে যাওয়ার কথা নয়। পরে আরও কয়েকজন একই কথা বলায় তাঁর বিশ্বাস হয়। এরই মধ্যে একজন দৌড়ে এসে জানান, তাঁর স্বামী মারা গেছেন।

সংসারের অনিশ্চয়তার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নুরুন নাহার। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাড়িতে ঘরের ভিটার জায়গাও ছিল না। বাড়ির একজনের কাছ থেকে অল্প পরিমাণ জায়গা কিনে ঋণ করে কোনোমতে ছোট্ট একটি আধা পাকা ঘর করেছেন তাঁর স্বামী। এখনো অনেক টাকা ঋণ আছে। ঘরে সন্তানদের খাবারেরও ব্যবস্থা নেই। তাঁর বাবার বাড়িতে গিয়েও আশ্রয় নেওয়ার অবস্থা নেই।

মাঈন উদ্দিনের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, তাঁর ভাই সক্রিয়ভাবে কোনো দল করতেন না। তবে বিএনপি সমর্থক ছিলেন। ৫ আগস্ট সারা দিনই বাড়িতে ছিলেন। বিকেলে গাড়ি গ্যারেজে রাখার কথা বলে বের হন। পরে থানার সামনে গন্ডগোল হচ্ছে শুনে দেখতে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে পুলিশের একটি গুলি এসে তাঁর বুকের বাঁ পাশে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গেই লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাঁর ভাই।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোয়াখালীর অন্যান্য উপজেলার মতো সোনাইমুড়ীতেও আনন্দ মিছিল বের করেছিল ছাত্র-জনতা। বিকেল আনুমানিক পৌনে পাঁচটার দিকে সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকা দিয়ে একটি আনন্দ মিছিল যাওয়ার সময় একদল মিছিলকারী আকস্মিক সোনাইমুড়ী থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ গুলি করলে প্রথম একজন মারা যান। এরপর মারা যান তিন পুলিশ সদস্যসহ আরও ছয়জন। বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করে এবং থানার সামনে থাকা পাঁচটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

‘দুই সন্তান নিয়ে আমি কোথায় যাব’

আপডেট সময় : ১১:১৯:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমাবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪

‘আমার বাপের বাড়িতে গিয়ে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। স্বামীও আমাকে অকূলে ভাসিয়ে চলে গেলেন। আমি কীভাবে এই দুই সন্তানকে মানুষ করব? কে তাদের দেখবে? কে তাদের মুখে খাবার তুলে দেবে? তারা কাকে বাবা বলে ডাকবে?’ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন গত ৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত মাইক্রোবাসের চালক মাঈন উদ্দিনের স্ত্রী নুরুন নাহার (২৬)।

সোনাইমুড়ী পৌরসভার শিমুলিয়া গ্রামে মাঈন উদ্দিনের বাড়ি। সেখানে গেলে কথা হয় নুরুন নাহারের সঙ্গে। পাশে বসা তাঁর দুই সন্তান মো. সিফাত উদ্দিন (৮) ও ইসফিয়া আক্তার (৬) এখনো বাবাকে খোঁজে বলে জানালেন তাদের মা। বাবা নেই, সেটা এখনো জানে না তারা।

নুরুন নাহার বলেন, রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ৫ আগস্ট সোমবার মাইক্রোবাস নিয়ে বের হননি তাঁর স্বামী। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে মাইক্রোবাস গ্যারেজে রেখে আসার কথা বলে বের হন। তখন তাঁরও ঘুম ভেঙে যায়। পেছন পেছন তিনিও গিয়েছিলেন। স্বামীকে বলেছিলেন, সোনাইমুড়ী বাজারের দিকে না যেতে। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।

নুরুন নাহার বলেন, সেদিন প্রতিবেশীরা বলছিলেন, সোনাইমুড়ী থানার সামনে গন্ডগোল হচ্ছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে পাশের বাড়ির একটি মেয়ে এসে তাঁকে জানায়, তাঁর স্বামী মাঈন উদ্দিন গুলি খেয়েছেন। তবে নুরুন নাহার তার কথা বিশ্বাসই করতে পারেননি। কারণ তাঁর স্বামী সক্রিয়ভাবে কোনো দল করতেন না। গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতেন। তিনি তো মারামারির মধ্যে যাওয়ার কথা নয়। পরে আরও কয়েকজন একই কথা বলায় তাঁর বিশ্বাস হয়। এরই মধ্যে একজন দৌড়ে এসে জানান, তাঁর স্বামী মারা গেছেন।

সংসারের অনিশ্চয়তার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নুরুন নাহার। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাড়িতে ঘরের ভিটার জায়গাও ছিল না। বাড়ির একজনের কাছ থেকে অল্প পরিমাণ জায়গা কিনে ঋণ করে কোনোমতে ছোট্ট একটি আধা পাকা ঘর করেছেন তাঁর স্বামী। এখনো অনেক টাকা ঋণ আছে। ঘরে সন্তানদের খাবারেরও ব্যবস্থা নেই। তাঁর বাবার বাড়িতে গিয়েও আশ্রয় নেওয়ার অবস্থা নেই।

মাঈন উদ্দিনের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, তাঁর ভাই সক্রিয়ভাবে কোনো দল করতেন না। তবে বিএনপি সমর্থক ছিলেন। ৫ আগস্ট সারা দিনই বাড়িতে ছিলেন। বিকেলে গাড়ি গ্যারেজে রাখার কথা বলে বের হন। পরে থানার সামনে গন্ডগোল হচ্ছে শুনে দেখতে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে পুলিশের একটি গুলি এসে তাঁর বুকের বাঁ পাশে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গেই লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাঁর ভাই।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোয়াখালীর অন্যান্য উপজেলার মতো সোনাইমুড়ীতেও আনন্দ মিছিল বের করেছিল ছাত্র-জনতা। বিকেল আনুমানিক পৌনে পাঁচটার দিকে সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকা দিয়ে একটি আনন্দ মিছিল যাওয়ার সময় একদল মিছিলকারী আকস্মিক সোনাইমুড়ী থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ গুলি করলে প্রথম একজন মারা যান। এরপর মারা যান তিন পুলিশ সদস্যসহ আরও ছয়জন। বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করে এবং থানার সামনে থাকা পাঁচটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।